অয়েলি স্কিনের জন্য ফুল কভারেজ মেকআপ গাইডলাইন জেনে নিন

Full Coverage Makeup Guide for Oily Skin

আনিকার বেষ্ট ফ্রেন্ড প্রিয়ন্তির বিয়ে কিছুদিন পরেই। অনেক আগে থেকেই বান্ধবীর বিয়েতে বেশ সাজুগুজু করে যাওয়ার শখ আনিকার। যাইহোক, মেকআপ সম্পূর্ণ কভারেজের পরে, এটি তৈলাক্ত হয়ে যায়, গলে যায় এবং অনেক সময় অয়েলি স্কিনের জন্য মেকআপও গলে যায়। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে যদি এটি স্থায়ী না থাকে তাহলে এটি আরও খারাপ দেখায়, যার মূলে রয়েছে অয়েলি স্কিন বা তৈলাক্ত ত্বক। হুম জানি, অনেক অয়েলি স্কিনের আপুদেরই এই সমস্যাগুলো হয়। এত কষ্ট করে সুন্দর করে সেজেগুজে সেটা যদি লাস্টিং না হয়, তাহলে তখন সেটা দেখতে কিন্তু আরো বাজে লাগে। সুতরাং, এই সমস্যা সমাধানের জন্য আজকের টিপসগুলো শুধুমাত্র আপনার জন্য।

কনসিলার, ফেস পাউডার বা ব্লাশ লাগানো হলো মেকআপ করার সাধারণ স্টেপ। তবে এই মেকআপ প্রক্রিয়ায় উপস্থিত থাকাকালীন যদি কিছু কৌশল অনুসরণ করা যায়, তবে অয়েলি স্কিনে একটি সম্পূর্ণ কভারেজ বেস দুর্দান্ত হবে এবং দাগ হবে না। আজ আমি আপনাদের সাথে অয়েলি স্কিন বা তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ফুল কভারেজ মেকআপ সম্পর্কিত কিছু টিপস শেয়ার করতে যাচ্ছি।

অয়েলি স্কিনের জন্য স্পেশাল বেইজ মেকআপ টিপস

১. স্কিন কেয়ার:

সৌন্দর্যের যত্ন শুধুমাত্র ত্বকের যত্ন এবং মেকআপের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, ত্বকের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। আপনার ত্বক যাই হোক না কেন, ত্বকের যত্ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ত্বকের সম্পূর্ণ যত্ন না নিলে, মেকআপ এবং হাইড্রেটিং ত্বকের যত্ন বিভিন্ন উপায়ে দুর্দান্ত দেখাবে। মনে করুন, আপনি যদি একটি অমসৃণ পৃষ্ঠে মেকআপের একটি লেয়ার বসান, তাহলে মেকআপের সেই লেয়ারটিও অসমান থাকবে। তাই ত্বককে মসৃণ, কোমল এবং ব্রণমুক্ত রাখতে স্কিনকেয়ারের জুড়ি নেই।

২. প্রাইমার:

আমরা বেশিরভাগই প্রাইমার এড়িয়ে যাই। ভাবি, ওটা লাগানো অতটা দরকারি না!আসল কথা হচ্ছে, আমি বলব যে প্রাইমার লাগানো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য আপনাকে অবশ্যই ম্যাটিফাইং প্রাইমার কিনতে হবে। যার ফলে, ত্বক থেকে তেল দূর করা সম্ভব এবং মেকআপ গলেও যাবে না বা ক্ষতিগ্রস্তও হবে না।

Shop at Saajkonna

৩. সঠিক ফর্মুলা বাছাইকরণ:

আপনার ত্বক তৈলাক্ত, কিন্তু আপনি যদি একটা ময়েশ্চারাইজিং, ডিউয়ি ফিনিশের ফাউন্ডেশন কিনে ব্যবহার করেন, তাহলে আপনার ফেইস অনেক বেশি তৈলাক্ত হবে, বেইজ দীর্ঘস্থায়ী হবে না। তাই নিজের জন্য সঠিক ফর্মুলা পণ্যটি বেছে নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

যাদের তৈলাক্ত ত্বক বা অয়েলি স্কিন তাদের তৈলাক্ত ত্বকের জন্য অবশ্যই মেকআপ কিনতে হবে। ফাউন্ডেশনের ক্ষেত্রে, একটি লিকুইড ম্যাট বা পাউডার ফাউন্ডেশন কিনবেন যা সম্পূর্ণ কভারেজ প্রদান করে। যত কম প্রোডাক্ট ব্যবহার করবেন, দেখতে ততটাই ন্যাচারাল লাগবে এবং মেকআপ গলে বা নষ্ট হয়ে যাবে না। কিন্তু যাদের তৈলাক্ত ত্বক আছে তাদের জন্য আমি ব্লটিংপেপার কেনার পরামর্শ দেব। ব্লটিংপেপার এর বিষয়ে আসছি পরবর্তীতে।

৪. ভালো মানের প্রোডাক্ট বাছাই করা:

যেহেতু আপনি মেকআপের পিছনে খরচ করছেন, তাই আমি বলব একটি ভালো মানের প্রোডাক্ট কিনে ব্যবহার করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। তাছাড়া ভালো মানের প্রোডাক্ট বলতে আমি হাই এন্ড বা দামি প্রোডাক্টের কথা বলছি না, ওষুধের দোকানেও অনেক ভালো মানের প্রোডাক্ট রয়েছে।

ইন্টারনেট ঘাটলেই সে সম্পর্কে ধারনা পেয়ে যাবেন বা ইউজারদের রিভিউ পড়ে নিতে পারেন। আমার নিজেরও অয়েলি স্কিন। আমি নিজেও একটা সময়ে উলটা পালটা মানহীন প্রোডাক্ট ব্যবহার করে দেখেছি এবং নিজের ভুলের জন্য নিজেই ভুগেছি। ফুল কভারেজ বেইজ পেতে হলে ভালো মানের মেকআপ প্রোডাক্ট কিনে ব্যবহার করাকে আমি খুবই গুরুত্বপূর্ন বলে মনে করি।

৫. অতিরিক্ত পাউডারের ব্যবহার:

অনেকেই মনে করেন যেহেতু আমার তৈলাক্ত ত্বক তাই আমি যদি প্রচুর পরিমানে পাউডার ব্যবহার করি তাহলে আমার ত্বক তেলমুক্ত থাকবে এবং মেকআপও ভালো হবে! প্রচুর পাউডার ব্যবহারের ফলে মেকআপ দেখতে আর ফ্ললেস লাগে না, বরং পাউডারি আর কেকি লাগে। তাই যতটুকু পাউডার প্রয়োজন ততটুকু ব্যবহার করুন।

ফুল কভারেজ মেকআপ স্টেপস

তৈলাক্ত ত্বকের বা অয়েলি স্কিনের জন্য সম্পূর্ণ কভারেজ মেকআপ পাওয়া এবং সারাদিন এটিকে সুন্দর করে ধরে রাখা একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। তবে কিছু টিপস এবং ট্রিকস ফলো করলে এটা অসম্ভব কিছুই নয়। চলুন জেনে নেই সেগুলো…

. মেকআপের জন্য স্কিনকে প্রিপেয়ার করা:

আগেই বলেছি, আপনার ত্বক ভালো হলে মেকআপ সুন্দর হবে এবং দেখতেও সুন্দর হবে। নিয়মিত ত্বকের যত্নের পাশাপাশি মেকআপ শুরুর আগে ত্বকের যত্ন নেওয়া উচিত।

  • প্রথমে তৈলাক্ত ত্বকের জন্য তৈরি ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করুন।
  • তারপর ত্বকে এক্সফোলিয়েট করুন। এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এক্সফোলিয়েশন ত্বকের মৃত কোষ দূর করবে এবং ত্বককে মসৃণ করবে। ফলে মেকআপ ভালোভাবে বসবে।
  • তারপর আপনি চাইলে একটি শীট মাস্ক লাগাতে পারেন। তবে এটা অপশনাল। শীট মাস্ক প্রয়োগ করার আগে অবশ্যই টোনার লাগিয়ে নিবেন। এবং যদি আপনি শীট মাস্ক না লাগান, তাহলে শুধুমাত্র টোনার লাগালেই চলবে।
  • তারপর ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। তবে খেয়াল রাখবেন সেটা যেন ম্যাটিফাইং হয়।
  • দিনের বেলা হলে এরপর সানস্ক্রিন লাগিয়ে নিবেন। ব্যস!! এটুকু করলেই মেকআপের জন্য আপনার স্কিন রেডি।

. প্রাইমার করা:

তারপর ম্যাটিফাইং প্রাইমার লাগিয়ে নিবেন। আপনার ত্বকে ছিদ্র থাকলে, আপনি পোর মিনিমাইজিং প্রাইমারও ব্যবহার করতে পারেন। অল্প একটু প্রাইমার হাতে নিয়ে স্কিনে হালকা পুশ করে করে লাগিয়ে নিবেন। আই মেকআপ করলে আইলিডে আগেই কনসিলার না লাগিয়ে অবশ্যই আই প্রাইমার লাগাবেন। এখন হয়তো আপনাদের মনে অবশ্যই প্রশ্ন জাগতে পারে যে, আপনি আপনার ত্বকের জন্য বা অয়েলি স্কিনের জন্য কোন প্রাইমারটি ব্যবহার করবেন। সমস্যা নেই আমি আপনাকে ২টি প্রাইমার সাজেস্ট করবো, আমি পার্সোনালি এই প্রাইমার ২টি ব্যবহার করেছি।

০১. Wet N Wild Photo Focus Matte Face Primer আমি নিজেও এই প্রাইমারটি ব্যবহার করেছি, এবং আমি আপনাকে বলবো আপনি কোনো টেনশন ছাড়াই চাইলে এই প্রাইমারটি ব্যবহার করতে পারেন। সাধারনত এই প্রাইমারটি আমার ভালো লাগার কারন-

  • এটি সূক্ষ্ম রেখা এবং বলিরেখা পূরণ করতে সাহায্য করে,
  • আপনার ত্বকের রং উজ্জ্বল করে,
  • আপনার ফাউন্ডেশন কেকিং থেকে আটকাতে সাহায্য করে,
  • আপনার মেকাআপকে সারাদিন ধরে রাখতে সাহায্য করে,
  • এই প্রাইমারটি সারাদিন আপনার মেকআপকে সতেজ এবং সুন্দর দেখাবে।

০২. Eveline 5 in 1 Primer তবে আপনার যদি বাজেট সমস্যা থাকে তাহলে আপনি এই প্রাইমারটি ব্যবহার করতে পারেন একদম নিষচিন্তে। কারন, বেশি দাম দিয়েই যে ভালো মানের প্রোডাক্ট পাওয়া যায় বিষয়টা আসলে এমন নয়। দাম কম বা বেশি হউক গুরত্বপূর্ন বিষয় হচ্ছে প্রোডাক্ট কিনবেন গুনগত মান দেখে। ইভেলিন ফাইব ইন ওয়ান প্রাইমারটি আপনি কেনো ব্যবহার করবেন বা আমি কেনো আপনাকে সাজেস্ট করছি তার কিছু বর্নণা দেয়া যাক-

  • এই প্রাইমারটি আপনার ত্বককে ম্যাটিফাই করে তুলবে,
  • ত্বকের ছিদ্র পূরণ করবে,
  • ত্বককে অভ্যন্তরীণ ক্ষতি থেকে রক্ষা করে,
  • স্কিন কেয়ার এবং ভর মেকআপের জন্য সেরা প্রাইমার হিসেবে কাজ করে,
  • তাছাড়া আপনার ত্বককে সতেজ ও সুন্দর রাখতে সহায়তা করবে।

৩. ফাউন্ডেশন:

এবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপে যাওয়া যাক। যেহেতু আমরা তৈলাক্ত ত্বকে ফুল কভারেজ মেকআপ করতে চাই, আগে একটা কালার কারেক্টর ইউজ করতে। আপনার মুখে যে সকল জায়গায় দাগ বা ডার্ক সার্কেল আছে সেসব জায়গায় কালার কারেক্টর লাগিয়ে নিন। এতে করে দাগ ঢাকার জন্য অতিরিক্ত ফাউন্ডেশনের লেয়ার দিতে হবে না।

এখন আপনি যে সমস্ত জায়গায় কালার ক্যারেক্টার লাগিয়েছেন সেখানে একটু একটু করে ফাউন্ডেশন লাগান এবং ড্যাম্প বিউটি স্পঞ্জের সাহায্যে ব্লেন্ড করুন। আপনি চাইলে ব্রাশ ব্যবহার করতে পারেন। যতটা প্রয়োজন ততটা ফাউন্ডেশন দিয়ে লাগান। সাথে ব্লেন্ড করতে থাকুন। অনেক সময় দেখা যায়, তৈলাক্ত ত্বকে নাকের মেকআপ প্রথমে আসে। এক্ষেত্রে আমি যাই করি নাকে অতিরিক্ত ফাউন্ডেশন বা কনসিলার ব্যবহার করি না। বিউটি স্পঞ্জে বেঁচে যাওয়া ফাউন্ডেশনটুকুই নাকে ব্লেন্ড করে নেই।

৪. কনসিলার:

আজকাল কনসিলার দিয়ে স্বাভাবিক মুখ হাইলাইট করা হয়। তাই না? এক্ষেত্রেও ম্যাট বেসড কনসিলার ব্যবহার করুন। বেশি ব্যবহার না করে শুধু মুখের উঁচু স্থানে কনসিলার লাগান এবং ব্লেন্ড করুন।

৫. পাউডার:

যাদের ত্বক অত্যন্ত তৈলাক্ত তারা লুজ পাউডার দিয়ে ফেস বেকিং করতে পারেন। চোখ, কপাল, নাক এবং চিবুকের নীচে শুকনো বিউটি স্পঞ্জে প্রচুর লুজ পাউডার লাগান। এটি ৩-৪ মিনিটের জন্য রেখে দিন এবং ব্রাশের সাহায্যে অতিরিক্ত পাউডার মুছে ফেলুন। এরপর কনট্যুর পাউডার, ব্লাশ, হাইলাইটার যাই লাগানো হোক না কেন, পাউডার বেসড হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। তাই আমি আপনাকে সাজেস্ট করবো Rimmel London Stay Matte Face Powder, অথবা Fitme Face Powder এই দুইটির যেকোনো একটি আপনি অনায়াসে ব্যবহার করতে পারেন। কারন, পারফেক্ট লুক দেয়, রেগুলার ব্যবহারের জন্য বেষ্ট ফেইস পাউডার, স্কিন ঘামাবে কম ফুল কভারেজ মেকআপ লুক দেয়।

৬. সেটিং স্প্রে:

বেইজ মেকআপের শেষ ধাপ হল স্প্রে সেট করা। সেটিং স্প্রে মেকআপকে লং লাস্টিং দেখাতে সাহায্য করে, মুখ থেকে অতিরিক্ত পাউডারি ভাব দূর করে। এক্ষেত্রেও ম্যাট ফিনিশিং সেটিং স্প্রে ব্যবহার করুন। বেইজ মেকআপের শেষে, আপনাকে অবশ্যই পুরো মুখে সেটিং স্প্রে লাগাতে হবে।

অয়েলি স্কিনে মেকআপ প্রোটেকশন

আহ! অনেক যুদ্ধ করার পর, অনেক টিপস অনুসরণ করে মেকআপ করলেন। এই সময়টা যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য কিছুত অবশ্যই করতে হবে। তাই না? আসুন জেনে নেই সুরক্ষার জন্য আমরা কী করতে পারি-

  • আমি উপরে ব্লটিং পেপার কেনার কথা বলেছি। ব্লটিং পেপার আমাদের মুখের অতিরিক্ত তেল শুষে নেয়। যেখানে যেখানে অয়েলি ভাব মনে হবে, কিছুক্ষন পর পর ব্লটিং পেপার দিয়ে হালকা করে চাপ দিন, তাহলেই হবে।
  • অনেকেই ভুল করেন যে মেকআপ করার পর ত্বকে অনেক বেশি ফেস পাউডার লাগান। এটা আরো কেক হয়ে যায়! যাই করুন না কেন, ব্লটিং পেপার দিয়ে তেল মুছে ফেলার পর পাউডার ব্রাশের সাহায্যে পুরো মুখে পাউডার লাগান। তাহলে টাচ আপ তো হবেই, সেই সঙ্গে মেকআপও হবে লং লাস্টিং।

এইতো জেনে নিলেন, অয়েলি স্কিনের জন্য ফুল কভারেজ মেকআপ গাইডলাইন সম্পর্কে। আশা করছি, এখন থেকে অয়েলি স্কিনে ফুল কভারেজ মেকআপ করতে আর সমস্যা হবে না। ভালো থাকুন। অথেনটিক মেকআপ প্রোডাক্টস কিনতে চাইলে সাজকন্যা.কম থেকে কিনতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Main Menu